সার্ক

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন | | NCTB BOOK
1

সার্কের পুরো নাম দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (South Asian Association for Regional Cooperation)। শুরুতে এটি দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হয় । পরবর্তীকালে ২০০৭ সালে আফগানিস্তান সার্কের ৮ম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতি সাধনের লক্ষ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সার্ক একটি আঞ্চলিক উন্নয়ন সংস্থা । 

গঠন:
১৯৮৫ সালের ৮ই ডিসেম্বরে ঢাকায় সার্কের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয় । বর্তমানে এর সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা আটটি। রাষ্ট্রগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান।
সার্কের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে পাঁচটি স্তর আছে। এগুলো হলো- ১) রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের শীর্ষ সম্মেলন ২) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন, ৩) স্ট্যান্ডিং কমিটি, ৪) টেকনিক্যাল কমিটি এবং ৫) সার্ক সচিবালয় । এগুলোর মাধ্যমে সার্কের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা হয়ে থাকে ।
সার্ক সচিবালয় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অবস্থিত। এর প্রধানকে বলা হয় সেক্রেটারি জেনারেল । প্রতিবছর সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রধানদের নিয়ে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সার্ক দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রায় ১৭৫ কোটি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ।

সার্ক গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অপুষ্টি, জনসংখ্যার আধিক্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি এসব দেশের দীর্ঘদিনের সমস্যা। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এসব সমস্যা দুরীকরণ ও পারস্পরিক উন্নয়নের লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে সার্ক গঠিত হয়। এছাড়াও সার্ক গঠনের আরও কতগুলো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। এগুলো আলোচনা করা হলো।

১। সার্কভুক্ত দেশগুলোর জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা;

২। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং সংস্কৃতির বিকাশ নিশ্চিত করা;

৩। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে জাতীয়ভাবে আত্মনির্ভরশীল করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ
করা;

৪। এ অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর সাধারণ স্বার্থে সহানুভূতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা;

৫। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন;

৬। অন্যান্য আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করে সার্কের লক্ষ্য বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া;

৭। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিরাজমান বিরোধ ও সমস্যা দূর করে পারস্পরিক সমঝোতা সৃষ্টি করা;

৮ । দেশগুলোর সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার নীতি মেনে চলা এবং

৯ । অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা ।

সার্কের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক:
সার্কের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। আশির দশকে সার্ক গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও মূলত: ১৯৮৫ সালে ঢাকা সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সার্ক যাত্রা শুরু করে। সার্কের উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলাদেশ সার্কের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সার্কের সদস্য হিসেবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ভারসাম্য রক্ষা, আঞ্চলিক বিরোধ নিষ্পত্তি এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সংকট সমাধানে বাংলাদেশ অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।

এছাড়া সদস্য দেশগুলোতে মানবপাচার রোধ, সন্ত্রাস দমন, পরিবেশ সংরক্ষণ, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির উন্নয়ন, রোগ-ব্যাধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ । এসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য নানা ধরনের যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে । এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সার্কের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করার জন্য বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

Content added By
Promotion